রাত পোহারেই ভোর। ভোরের আলোতে জেগে উঠে আলোকিত হয় পৃথিবীর প্রকৃতি। এই প্রকৃতির সাথে রাস্তার ধারে কিংবা রেল লাইনে ঘুমিয়ে পড়া ছেলেটি ছিলো এক টোকাই। দিন-টা যেমন করেই যেখানে সেখানে কেঁটে যাক না,রাতটা তার কাঁটে খোলা আকাশের নীচে সেই রেল-স্টেশন কিংবা পথের ধার-প্রান্তে। এ জগতে যেনো তার অনেক কিছুই অজানা । বয়স-টা তার বেশি না,, যদিও সে ছিলো এক টোকাই। টোকাই ছেলেদের জীবন সম্পর্কে আমরা হয়তো কম-বেশি একটু আধটু জানি । কিন্তু টোকাই বলে কি সে মানুষ না, অবশ্যই সে মানুষ,,,কিন্তু আমাদের সমাজে তারা অবহেলিত কিংবা বঞ্চিত মানুষ,,অন্যদিকে টোকাই ছেলেগুলো বেঁচে থাকার জন্য মানুষ হিসাবে সংগ্রামি হয়,,এটা বিধাতার পরিচালনায় তো জগতের জীবন,,বিধাতা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারেন,,সেই বিধাতার উপর দৃঢ় বিশ্বাস রেখে পথ-চলুন।
,
যাই হোক,ছেলেটা ছিলো অনেক-টাই উদাসীন অদ্ভুদ এক ছেলে,,নীতিতে অটুট ছিলো সে,,তার মনে ভালোবাসা বিরাজ করতো প্রায় সীমাহিন,, কিন্তু এই সমাজের মানুষগুলো তাকে মানুষ মনে না করে,টোকাই নামেই চিনতো । কারণ সে রাস্তায় পাড়ি-জমানো ছেলে, এ জগতে তার নিদির্ষ্ট কোনো বাসা-বাড়ি নেই,,এই দেশের মাটিই তার পাড়ি জমানো স্থান,,খোলা আকাশের নিচে স্বপ্ন দেখে সে পাড়ি জমায়,,সে জানে না বাঙালিদের সংগ্রামি ইতিহাস, সে জানে না প্রাচীন ইতিহাস,কিন্তু সে গল্পের আকারে এগুলো শুনেছে, শুনেছে সে অনেক কিছুই । তার প্রতিদিনের বেঁচে থাকার নাটক ছিলো অন্যরকম বিচিত্রময়,, ক্ষুদার্থ পেট আর খালি পকেট নিয়েই তার দিন-যাপন প্রতিনিয়ত ।
হঠাৎ কোনো একদিন তার কানে বিরাজ করেছে কে যেনো তার মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায়, সে বলে শেষ পর্যন্ত আমার বলা মুখের ভাষাটাও কেড়ে নিবে,,পিতা-মাতাকে তো ব্রিটিশ যুদ্ধে হারালাম,,,এখানো আবার আমার মায়ের মুখের ভাষা,আমার ভাষাকে হারাতে হবে,,না এটা হয় না, এটা কখনো হতে দিবো না।
সে মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় যেভাবেই হোক ভাষাকে রক্ষা করতে হবে,,সে আন্দোলন সংগ্রামে ভয় পায় না, কারণ তার জীবনের বেঁচে থাকাটা প্রতিনিয়তই সংগ্রাম দিয়ে ঘেরা, যেহেতু সে পথের ধারে পড়ে থাকা টোকাই ছেলেটি। কিন্তু তার মনে বিরাজ করে মুখের ভাষাকে উদ্ধার করতে সে জীবন দিতেও রাজি । তাই সে সংগ্রাম আন্দোলনের মিছিলের কাতারে মিশে যায়,,সেই মিশে যাওয়ার দখলে সে বিলিয়ে দেয় রাজপথে তার এক তাজা প্রাণ,,বিলিয়ে দেয় সে তার সংগ্রামী পদধূলী ।
ভাষার জন্য অবশেষে সে শহীদ হয় । সে তাঁর প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনলো তার মুখের ভাষা, ছিনিয়ে আনলো তার মায়ের মুখের ভাষা । এভাবে সে ত্যাগ করলো পৃথিবী নামক জগত থেকে কিন্তু রেখে গেলো এক বুক ভরা স্বপ্নের বাংলা ভাষা। রাস্তার ধারে পড়ে থাকা ছেলেটা প্রমাণ করলো মনুষ্যত্বের দিক দিয়া সে উচ্চশ্রেণীর মানুষ,,আত্তত্যাগের বিনিময়ে সে ভাষাকে রক্ষা করে। তাই প্রতিবছর ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া এই মানুষগুলোর আত্তত্যাগ্যের স্মৃতিস্মরণে এই দিনটিকে আমরা শ্রদ্ধার সাথে শহীদ দিবস কিংবা মাতৃভাষা দিবস হিসাবে উদযাপন করি,,দিনটি আন্তজার্র্তিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও স্বীকৃত-প্রাপ্ত। ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া মানুষগুলো বাঙালির শ্রেষ্ট সন্তান।
টোকাই নামক ঐ ছেলেটিও দেখিয়েছে আমাদের সংগ্রামের পদধূলী । যদিও সমাজে এই মানুষগুলো বঞ্চিত এবং অবহেলিত,,কিন্তু তাদের কাছ থেকে জীবন সংগ্রাম নিয়ে অনেক কিছুই আমাদের শিখার আছে।
টোকাই নামক রাস্তায় পড়ে থাকা ছেলেটিও আমাদের দেখিয়েছে মনুষ্যত্বের দিক দিয়া শ্রেষ্টত্ব। ভালোবাসি আর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি ভাষা আর দেশের জন্য প্রাণ দেয়া এই মানষগুলোকে । যে যে বংশদ্বরের মানুষ হোক না কেন, আন্দোলন আর সংগ্রামের দিক দিয়া দেশ আর ভাষার জন্য প্রাণ দেয়া মানুষগুলোই বাঙালি জাতির শ্রেষ্ট সন্তান,,,ভালোবাসি তাদের